Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২nd অক্টোবর ২০২৪

বারি গম ২৮

ভূমিকা: গম গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি গম ২৮ একটি স্বল্পমেয়াদী উচ্চ ফলনশীল গমের জাত। সিমিটে শংকরায়ণকৃত এ কৌলিক সারিটি ট্রায়ালের মাধ্যমে এদেশে পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন নার্সারীতে ও ফলন পরীক্ষায় উচ্চ ফলনশীল প্রমাণিত হওয়ায় বি এ ডাব্লিউ ১১৪১ নামে সারিটি নির্বাচন করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে ও মাঠ পর্যায়ে | ফলন পরীক্ষায় এ সারিটি ভাল বলে প্রমাণিত হয় । উক্ত সারিটি দেশের সকল অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য ২০১২ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বারি গম ২৮ নামে অবমুক্ত করা হয় ।

প্রযুক্তির বিবরণ:

জাতের বৈশিষ্ট্য:

  • গাছের উচ্চতা ৯৫-১০০ সেন্টিমিটার ।
  • গাছ প্রতি কুশির সংখ্যা ৪-৫টি।
  • শীষ বের হতে ৫৫-৬০ দিন এবং বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০২-১০৮ দিন সময় লাগে ।
  • শীষ লম্বা এবং প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪৫-৫০টি। দানার রং সাদা, চকচকে ও আকারে মাঝারী ।
  • হাজার দানার ওজন ৪৩-৪৮ গ্রাম ।
  • পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং পাতার মরিচা রোগ প্রতিরোধী ।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ৪৫০০-৫৫০০ কেজি ।
  • জাতটি তাপ সহিষ্ণু হওয়ায় দেরীতে বপনে শতাব্দীর চেয়ে ১৫-২০% ফলন বেশি দেয় ।

প্রযুক্তি হতে ফলন: হেক্টরপ্রতি ফলন ৪৫০০-৫৫০০ কেজি ।

প্রয়োগের স্থান: জাতটি কিছুটা তাপসহিষ্ণু এবং দেরিতে বপনেও ভাল ফলন দেয়। রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের সর্বত্র আবাদের জন্য উপযোগী।

অবমুক্তির সাল: ২০১২

উৎপাদন কলাকৌশল:

বপনের সময়: বীজ বপনের উপযুক্ত সময় নভেম্বর মাসের ১৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত (অগ্রহায়ণ মাসের ১ম থেকে ২য় সপ্তাহ)।

সারের মাত্রা: জমি চাষের শুরুতে হেক্টর প্রতি ৫.০-৭.৫ টন (শতাংশে ২০-২৮ কেজি) গোবর/কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করা উত্তম । শেষ চাষের পূর্বে জমিতে হেক্টর প্রতি নিম্নোক্ত সার সমান ভাবে ছিটিয়ে চাষ ও মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন । সারের নাম হেক্টরে মাত্রা
শতাংশে মাত্রা
ইউরিয়া
১৫০-১৭৫ কেজি
৬০০-৭০০ গ্রাম
টিএসপি
১৩৫-১৫০ কেজি
৫৪০-৬০০ গ্রাম
এম ও পি
১০০-১১০ কেজি
৪০০-৪৪০ গ্রাম
জিপসাম
১১০-১২৫ কেজি
৪৪০- ৫০০ গ্রাম
প্রথম সেচের পর মাটি ভেজা থাকা অবস্থায় প্রতি হেক্টরে ৭৫-৮৫ কেজি (শতাংশে ৩০০-৩৫০ গ্রাম) ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে বোরন সারের ঘাটতি হলে হেক্টরে প্রতি ৬.২৫-৭.৫০ কেজি (শতাংশে ২৫-৩০ গ্রাম) বরিক এসিড শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে ।
মাটির অম্লীয় মান (pH) ৫.৫ এর কম হলে হেক্টর প্রতি ১০০০ কেজি (শতাংশে ৪ কেজি) হারে ডলোচুন গমবীজ বপনের কমপক্ষে ৭ দিন আগে প্রয়োগ করতে হবে । তিন বছর পর পর মাটির অম্লীয় মান পরীক্ষা পূর্বক জমিতে ডলোচুন প্রয়োগ করা যেতে পারে ।

 

সেচ প্রয়োগঃ
মাটির প্রকার ভেদে গম আবাদে ২-৩টি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পর) হালকা ভাবে, দ্বিতীয় সেচ শীষ বের হওয়ার পূর্বে (বপনের ৫০-৫৫ দিন পর) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) হালকা ভাবে দিন ।


অন্যান্য পরিচর্যাঃ
বীজ বপনের পর ১০-১২ দিন পর্যন্ত পাখি তাড়াতে হবে যাতে জমিতে চারার সংখ্যা সঠিক থাকে । প্রথম সেচের পর জমিতে 'জো' আসলে আগাছা দমনের জন্য নিড়ানী দিতে হবে । চওড়া পাতা জাতীয় আগাছা (যেমন বথুয়া, কাঁকরি, বিষকাটালি ইত্যাদি) দমনের জন্য বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে ২৫ গ্রাম এফিনিটি পাউডার (আগাছানাশক) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ভাল ভাবে মিশিয়ে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে ৫ শতাংশ জমিতে একবার প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে । 
গমক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমন হলে ফাঁদ পেতে বা বিষটোপ (জিঙ্ক ফসফাইড বা ল্যানির্যাট) দিয়ে দমন করতে হবে । বীজ গমের ক্ষেতে শীষ বের হওয়ার শুরু হতে পাকা পর্যন্ত কয়েকবার অন্য জাতের মিশ্রণ, রোগাক্রান্ত গাছ এবং আগাছা গোড়াসহ উঠিয়ে ফেলতে হবে ।


রোগ-বালাই দমনঃ
দেরিতে বপনকৃত গম ক্ষেতে পাতার দাগ রোগ দমনের জন্য শীষ বের হওয়ার সময় ৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে ।


ফসল সংগ্রহঃ
গম গাছ সম্পূর্নরূপে পেকে হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করে কাটা ও মাড়াইয়ের উপযুক্ত হলে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সকালের দিকে কেটে দূপুরে মাড়াই করা উত্তম । মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে সহজেই গম মাড়াই করা যায়।
বীজ গমক্ষেত আলাদা ভাবে কাটা মাড়াই করতে হবে এবং মাড়াইয়ের পর ৩-৪ দিন হালকা রোদে শুকিয়ে নিতে হবে যাতে বীজের আর্দ্রতা শতকরা ১২ ভাগ বা তার নিচে থাকে। দানা দাঁতের নিচে চাপ দিলে কট করে শব্দ হলে বুঝতে হবে উক্ত বীজ সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত হয়েছে । সংরক্ষণের পূর্বে চালনি দিয়ে চেলে পুষ্ট বীজ বাছাই করে নিতে হবে। রোদে শুকানো বীজ ছায়ায় ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে ।


বীজ সংরক্ষণঃ
কেরোসিন/বিস্কুট টিন, ধাতব বা প্লাস্টিক ড্রাম, পলিথিন ব্যাগ, ইত্যাদি গমবীজ সংরক্ষণের জন্য উত্তম। বীজ সংরক্ষণের পাত্রটি পরিষ্কার, শুকনো, বায়ুরোধী ও ছিদ্রমুক্ত হতে হবে। বীজ দ্বারা পাত্র ভর্তি করতে হবে যাতে পাত্রের ভিতরে কোন ফাঁকা জায়গা না থাকে ।
পাত্র ভর্তি না হলে শুকনো পরিস্কার বালি দ্বারা ফাঁকা জায়গা পূর্ণ করে ভাল ভাবে ঢাকনা আটকিয়ে মাঁচা বা কাঠের পাটাতনের উপর রাখতে হবে ।

 

বারি গম ২৮

বুকলেট ডাউনলোড করুন