ভূমিকা: গম গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি গম ৩২ একটি উচ্চ ফলনশীল তাপ সহিষ্ণু গমের জাত। জাতটি ২০১৭ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক দেশের সকল অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। শতাব্দী এবং গৌরব জাতের মধ্যে শংকারয়নের মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। বিভিন্ন প্রজন্মে বাছাইয়ের পর এ জাতের কৌলিক সারিটি নির্বাচন করা হয়। কৌলিক সারিটি বিভিন্ন নার্সারীতে ও ফলন পরীক্ষায় উচ্চ ফলনশীল প্রমাণিত হওয়ায় বি এ ডবিøউ ১২০২ নামে সারিটি নির্বাচন করা হয়। বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে ও মাঠ পর্যায়ে ফলন পরীক্ষায় এ সারিটি ভাল বলে প্রমাণিত হয়। দেশের সকল অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য ২০১৭ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বারি গম ৩২ নামে অবমুক্ত করা হয়।
প্রযুক্তির বিবরণ:
ফলন ৪.৩-৫.২ টন/হে.
প্রয়োগের স্থানঃ জাতটি কিছুটা তাপসহিষ্ণু এবং দেরিতে বপনেও ফলন দেয়। দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের সর্বত্র আবাদের জন্য উপযোগী।
উদ্ভাবনের বৎসর: ২০১৭
উৎপাদন কলাকৌশল:
বপনের সময়: বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫-৩০ নভেম্বর (১-১৫ অগ্রহায়ণ) এবং বীজ হার ১২০ কেজি/হেক্টর।
সারের মাত্রা: ইউরিয়া ১৫০-১৭৫ কেজি/হে., টিএসপি ১৩৫-১৫০ কেজি/হে., এমওপি ১০০-১১০ কেজি/হে., জিপসাম ১১০-১২৫ কেজি/হে. এবং বরিক এসিড ৬.২৫-৭.৫০ কেজি/হে.। সার প্রয়োগ পদ্ধতি: ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সার জমি তৈরির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপনের ১৭-২১ দিনের মধ্যে বাকি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মাটির pH মান ৫.৫ এর কম হলে হেক্টরপ্রতি ১০০০ কেজি (শতাংশে ৪ কেজি) হারে ডলোচুন গম বীজ বপনের কমপক্ষে ৭ দিন আগে প্রয়োগ করতে হবে। তিন বছর পর পর মাটির ঢ়ঐ মান পরীক্ষা পূর্বক জমিতে ডলোচুন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
আগাছা দমন: চওড়া পাতা জাতীয় আগাছা দমনের জন্য বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে ২৫ গ্রাম এফিনিটি পাউডার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে।
সেচ প্রয়োগ: মাটির প্রকার ভেদে ২-৩ টি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পর) হালকা ভাবে, দ্বিতীয় সেচ শীষ বের হওয়ার পূর্বে (বপনের ৫০-৫৫ দিন পর) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) হালকা ভাবে দিতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যা: বীজ বপনের পর ১০-১২ দিন পর্যন্ত পাখি তাড়াতে হবে যাতে জমিতে চারার সংখ্যা সঠিক থাকে। গম ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমন হলে ফাঁদ পেতে বা বিষটোপ (জিঙ্ক ফসফাইড বা ল্যানির্যাট) দিয়ে দমন করতে হবে।
রোগ-বালাই দমন: দেরিতে বপনকৃত গম ক্ষেতে পাতার দাগ রোগ দমনের জন্য শীষ বের হওয়ার সময় ৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে।
ফসল কর্তন: গম গাছ সম্পূর্নরূপে পেকে হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করে কাটা ও মাড়াইয়ের উপযুক্ত হলে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সকালের দিকে কেটে দূপুরে মাড়াই করা উত্তম। মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে সহজেই গম মাড়াই করা যায়। মাড়াই করার পর ৩-৪ দিন হালকা রোদে শুকিয়ে বীজের আর্দ্রতা শতকরা ১২ ভাগ বা তার নীচে নামিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
বারি গম ৩২