খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে উচ্চ ফলনশীল গম ও ভুট্টার জাত এবং টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) থেকে আলাদা হয়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিডাব্লিউএমআরআই) প্রতিষ্ঠিত হয়। নবগঠিত প্রতিষ্ঠানটিতে গম ও ভুট্টার জার্মপ্লাজম সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, সংকরায়ন ও মূল্যায়নের মাধ্যমে সাধারণ পরিবেশসহ তাপ, লবণাক্ততা, জলবদ্ধতা ও খরা সহনশীল জাত উদ্ভাবন এবং অবমুক্তকরণের কাজ করা হয় এবং উদ্ভাবিত জাতসমূহের প্রজনন বীজ ও মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করে তা সরকারী ও বেসরকারী বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসহ অগ্রগামী কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়। প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য স্টেকহোল্ডার প্রশিক্ষণ, উপযোগিতা পরীক্ষণ, কর্মশালা, মাঠ দিবস ইত্যাদির আয়োজনসহ বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা প্রকাশের মাধ্যমে গম ও ভুট্টার সম্প্রসারণেও প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট নিজস্ব তথ্য বাতায়ন, মোবাইল অ্যাপ ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ই-তথ্য সেবা প্রদান করে। উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তিসমুহের আর্থ-সামাজিক বিশ্লেষণ করে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় ফসল দু’টির বিস্তার, চাষাবাদ ও জনগণের চাহিদা নিরুপণ করে উন্নয়নের রোডম্যাপ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি হতে এ পর্যন্ত ৩৭টি গমের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে । আধুনিক উচ্চফলনশীল রোগ প্রতিরোধী জাত ও উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দেশে গমের গড় ফলন অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা ৩.৭৮ টন/হেক্টর-এ উন্নীত হয়েছে। ইনস্টিটিউটের ভুট্টা বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে পরিবর্তিত জলবায়ূ সহনশীল ভুট্টার বেশ কিছু জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছে। ভুট্টা বিজ্ঞানী কর্তৃক এ পর্যন্ত ২০টি হাইব্রিড ভুট্টা, একটি খই ভুট্টা ও একটি হাইব্রিড বেবিকর্ন এর জাত উদ্ভাবন করা হয়। ২০২২ সালে বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা ২ অবমুক্তির জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন পায়। রবি মৌসুমে চাষযোগ্য এ জাতটি সর্বোচ্চ ১৪ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম, ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় হেলে ও ভেঙ্গে পড়েনা। ভুট্টা থেকে তেল উৎপাদন একটি সম্ভানাময় প্রযুক্তি। দেশে বর্তমানে উৎপাদিত ৫৪ লক্ষ টন ভুট্টা থেকে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টন তেল উৎপাদন করা সম্ভব, যার বাজার মূল্য ৪,০০০ কোটি টাকা।
গম ও ভুট্টার উন্নয়নের জন্য সুদুপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। হাইথ্রোপুট ফিনোটাইপিং ও মলিকুলার ফিংগারপ্রিন্টিংসহ অত্যাধুনিক গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল, প্রতিকূলতা সহিষ্ণু, স্বল্প মেয়াদি, খাটো আকৃতির, ঢলে পড়া প্রতিরোধী ও স্বল্প উপকরণনির্ভর গম ও ভুট্টার জাত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করে ফসল দুটির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর কার্যক্রম ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ইনট্রোডাকসন ও সংকরায়নের মাধ্যমে বায়োফরটিফাইড গম ও ভুট্টার জাত আবিস্কার করা, শস্য সংগ্রহোত্তর ফসল ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করে গম ও ভুট্টার বহুবিধ ব্যবহার আবিস্কার করা এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে চাষাবাদের উন্নত পদ্ধতি আবিস্কারসহ নানাবিধ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গুরুত্বপুর্ণ গবেষণা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনায় অর্ন্তভুক্ত। এই পরিকল্পনায় পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রভাবকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবেলার কাজ প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অপ্রচলিত এলাকা যেমন বিলুপ্ত ছিট মহল, চরাঞ্চল, উপকুলীয় লবণাক্ত এলাকা, বরেন্দ্র খরা অঞ্চল, হাওড় ও পাহাড়ী পকেট জমিতে গম ও ভুট্টার চাষ বৃদ্ধি করার কাজও চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রধান কার্যালয় দিনাজপুরের নশিপুরে অবস্থিত। বর্তমানে ১২টি গবেষণা বিভাগ, ৫টি আঞ্চলিক কেন্দ্র, ১টি বীজ উৎপাদন কেন্দ্র ও ১টি বীজ উৎপাদন উপ-কেন্দ্রে গম ও ভুট্টার গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।