ভূমিকা: গম গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি গম ৩১ একটি স্বল্পমেয়াদী উচ্চ ফলনশীল গমের জাত। সিমিটে শংকরায়ণকৃত এ কৌলিক সারিটি ট্রায়ালের মাধ্যমে এদেশে পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন নার্সারীতে ও ফলন পরীক্ষায় উচ্চ ফলনশীল প্রমাণিত হওয়ায় বি এ ডব্লিউ ১১৮২ নামে সারিটি নির্বাচন করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে ও মাঠ পর্যায়ে ফলন পরীক্ষায় এ সারিটি ভাল বলে প্রমাণিত হয়। উক্ত সারিটি দেশের সকল অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য ২০১৭ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বারি গম ৩১ নামে অবমুক্ত করা হয়।
প্রযুক্তির বিবরণ:
জাতের বৈশিষ্ট্য: জাতটি খাট আকৃতির, উচ্চতা ৯১-৯৮ সে.মি.এবং এর কান্ড শক্ত থাকায় সহজে হেলে পড়ে না। জীবনকাল ১০০-১০৮ দিন। প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪৭-৫২টি। দানা সাদা ও চকচকে, হাজার দানার ওজন ৪৮-৫২ গ্রাম। জাতটি পাতা ও কান্ডের মরিচা রোগ (Ug99 race) প্রতিরোধী এবং পাতার দাগ রোগ সহিষ্ণু।
প্রযুক্তি হতে ফলন: হেক্টর প্রতি ফলন ৪৬০০-৫০০০ কেজি
প্রয়োগের স্থানঃ জাতটি কিছুটা তাপসহিষ্ণু এবং দেরিতে বপনেও ফলন দেয়। দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের সর্বত্র আবাদের জন্য উপযোগী।
উদ্ভাবনের বৎসর: ২০১৭
উৎপাদন কলাকৌশল:
বপনের সময়: বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫-৩০ নভেম্বর (১-১৫ অগ্রহায়ণ) এবং বীজ হার ১২০ কেজি/হেক্টর।
সারের মাত্রা: ইউরিয়া ১৫০-১৭৫ কেজি/হে., টিএসপি ১৩৫-১৫০ কেজি/হে., এমওপি ১০০-১১০ কেজি/হে., জিপসাম ১১০-১২৫ কেজি/হে. এবং বরিক এসিড ৬.২৫-৭.৫০ কেজি/হে.। সার প্রয়োগ পদ্ধতি: ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সার জমি তৈরির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপনের ১৭-২১ দিনের মধ্যে বাকি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মাটির pH মান ৫.৫ এর কম হলে হেক্টরপ্রতি ১০০০ কেজি (শতাংশে ৪ কেজি) হারে ডলোচুন গম বীজ বপনের কমপক্ষে ৭ দিন আগে প্রয়োগ করতে হবে। তিন বছর পর পর মাটির ঢ়ঐ মান পরীক্ষা পূর্বক জমিতে ডলোচুন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
আগাছা দমন: চওড়া পাতা জাতীয় আগাছা দমনের জন্য বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে ২৫ গ্রাম এফিনিটি পাউডার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে।
সেচ প্রয়োগ: মাটির প্রকার ভেদে ২-৩ টি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পর) হালকা ভাবে, দ্বিতীয় সেচ শীষ বের হওয়ার পূর্বে (বপনের ৫০-৫৫ দিন পর) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) হালকা ভাবে দিতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যা: বীজ বপনের পর ১০-১২ দিন পর্যন্ত পাখি তাড়াতে হবে যাতে জমিতে চারার সংখ্যা সঠিক থাকে। গম ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমন হলে ফাঁদ পেতে বা বিষটোপ (জিঙ্ক ফসফাইড বা ল্যানির্যাট) দিয়ে দমন করতে হবে।
রোগ-বালাই দমন: দেরিতে বপনকৃত গম ক্ষেতে পাতার দাগ রোগ দমনের জন্য শীষ বের হওয়ার সময় ৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে।
ফসল কর্তন: গম গাছ সম্পূর্নরূপে পেকে হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করে কাটা ও মাড়াইয়ের উপযুক্ত হলে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সকালের দিকে কেটে দূপুরে মাড়াই করা উত্তম। মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে সহজেই গম মাড়াই করা যায়। মাড়াই করার পর ৩-৪ দিন হালকা রোদে শুকিয়ে বীজের আর্দ্রতা শতকরা ১২ ভাগ বা তার নীচে নামিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
বারি গম ৩১